শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার সম্ভাবনা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি দিক উঠে আসে। শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী, ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান। তার ফেরার পথ এবং প্রক্রিয়া রাজনৈতিক, আইনি এবং কূটনৈতিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।
ফেরার সম্ভাবনা
১. রাজনৈতিক পরিস্থিতি: বর্তমানে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে, যার নেতৃত্বে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যাকাণ্ড এবং দুর্নীতির মতো গুরুতর অভিযোগে তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছেন, নির্বাচন ঘোষিত হলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন এবং আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখনও রয়েছে। তবে, বর্তমান সরকার ও জনগণের একাংশের বিরোধিতার কারণে তার ফেরা রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জিং।
২. জনসমর্থন: আওয়ামী লীগের একটি সমর্থক গোষ্ঠী এখনও তাকে ফিরিয়ে আনতে চায়। তবে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের পর জনমনে তার প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা তার ফেরার পথে বড় বাধা হতে পারে।
৩. আন্তর্জাতিক সমর্থন: শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকলেও, ভারত তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে বলে মনে করা হয়। ভারতের সমর্থন তার ফেরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে, তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তাকে ফেরাতে চাপ সৃষ্টি করছে।
ফিরতে হলে যা করতে হবে
১. আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা:
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একাধিক মামলা রয়েছে, যার মধ্যে ২০২৪ সালের আন্দোলনে হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং গুম-ক্রসফায়ারের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য। তাকে ফিরতে হলে এসব মামলায় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
বাংলাদেশ সরকার তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে এবং ইন্টারপোলের সহায়তাও চেয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে তাকে আইনি লড়াই করতে হবে।
২. রাজনৈতিক সংস্কার ও নির্বাচন:
সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতে, নির্বাচন ঘোষণা হলে শেখ হাসিনা ফিরতে পারেন। তবে, অন্তর্বর্তী সরকার ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে জনসমর্থন ফিরিয়ে আনতে হবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জয় দাবি করেছেন। দলকে শক্তিশালী করতে তাকে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
৩. কূটনৈতিক সমঝোতা:
ভারতের সঙ্গে সমঝোতা করে নিরাপদে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ভারত যদি তাকে প্রত্যর্পণ না করে, তবে রাজনৈতিকভাবে ফেরার পথ সুগম হতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সমর্থনও তার ফেরার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
৪. ব্যক্তিগত নিরাপত্তা:
দেশে ফিরলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার প্রতি জনরোষের কারণে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২৫ সালের মার্চের শুরুতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে তার বিচার শুরু হতে পারে।
শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ফেরার পথ রয়েছে, তবে তা অত্যন্ত জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাকে আইনি মামলা মোকাবিলা, দলকে পুনর্গঠন, জনসমর্থন ফিরিয়ে আনা এবং কূটনৈতিক সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে তার ফেরার সম্ভাবনা অনেকটাই নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক চাপের ওপর নির্ভর করছে। তবে, আইনি ও জনরোষের বাধা অতিক্রম না করলে তার ফেরা কঠিন হবে।