নতুন রাজনৈতিক দলের নাম জাতীয় নাগরিক পার্টি, কে কোন পদে? এই দলটি যে কারণে গঠন

নতুন রাজনৈতিক দল "জাতীয় নাগরিক পার্টি" (National Citizens Party - NCP) ২০২৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই দলটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। দলটির আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, এবং শীর্ষ পদগুলোতে নিম্নলিখিত নেতাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে:

    • আহ্বায়ক: নাহিদ ইসলাম
    • সদস্যসচিব: আখতার হোসেন
    • মুখ্য সমন্বয়ক: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
    • জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক: সামান্তা শারমিন
    • মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল): সারজিস আলম
    • মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল): হাসনাত আবদুল্লাহ
    • জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক: আব্দুল হান্নান মাসউদ
    • দপ্তর সম্পাদক: সালেহ উদ্দিন সিফাত

এছাড়াও, দলটির ১৫১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক পদে আরও বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:

যুগ্ম আহ্বায়ক (আংশিক তালিকা): নুসরাত তাবাসসুম, মনিরা শারমিন, মাহবুব আলম, সারোয়ার তুষার, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন, তাজনুভা জাবীন, সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া, আতিক মুজাহিদ, আশরাফ উদ্দীন মাহাদী, অর্পিতা শ্যামা দেব, তানজিল মাহমুদ, অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, জাবেদ রাসিন, এহতেশাম হক, হাসান আলী।

যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক (আংশিক তালিকা): তারিকুল ইসলাম (যুব), আব্দুল আহাদ, দিলশানা পারুল, আবু হানিফ, আব্দুজ জাহের, মাজহারুল ইসলাম ফকির, গোলাম মোর্তজা সেলিম, আশেকীন আলম, জাহিদুল বারী, কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস, ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু, শেখ মোহাম্মদ শাহ মঈনুদ্দিন, মারজুক আহমেদ, সাদ্দাম হোসেন।

দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সদস্যসচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি পরবর্তীতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। এই তথ্যগুলো বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সংগৃহীত।

National Citizens Party

"জাতীয় নাগরিক পার্টি" (National Citizens Party - NCP) গঠনের মূল কারণ হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃত্বে একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যকে সামনে রাখা হয়েছে। এই দলটির উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য নিম্নলিখিত কারণগুলোর ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে:

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা:

২০২৪ সালে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটে। জাতীয় নাগরিক পার্টি এই আন্দোলনের আদর্শ ও গতিকে রাজনৈতিক কাঠামোর মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে। দলটির নেতারা, যেমন নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ, এই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি:
দলটির ঘোষণা অনুযায়ী, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ক্ষমতায়নের জন্য কাজ করতে চায়। তারা বিশ্বাস করে যে, পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে, এবং একটি নতুন দলের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
জাতীয় ঐক্য ও নাগরিক অধিকার:
দলটির নাম "জাতীয় নাগরিক পার্টি" থেকেই বোঝা যায় যে, তারা জাতীয় ঐক্য এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছে। তারা দাবি করেছে যে, সকল ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
প্রতিবাদী তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব:
এই দলটি মূলত তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে গঠিত, যারা ২০২৪ সালের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। তারা পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও দলগুলোর বিকল্প হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যাতে তরুণদের কণ্ঠ রাজনীতিতে প্রতিফলিত হয়।
স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন:

দলটির নেতারা বারবার উল্লেখ করেছেন যে, তারা একটি স্বৈরাচারমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়তে চান। ২০২৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর তারা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে।

দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, "আমরা রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের পাশে থাকতে চাই। আমাদের লড়াই শুধু রাস্তায় নয়, সংসদেও হবে।" এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত পরিবর্তনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য কাজ করতে চায়।

সংক্ষেপে, জাতীয় নাগরিক পার্টি গঠন করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলাফলকে সুসংহত করতে, গণতন্ত্র ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখতে এবং তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে একটি নতুন রাজনৈতিক বিকল্প তৈরি করতে।

Post a Comment

Previous Post Next Post