২০২৫ সালে বিদ্যালয়ে পাঠ হবে নতুন শপথ বাক্য

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শপথ বাক্যের গুরুত্ব

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শপথ বাক্য পাঠ করানো একটি ঐতিহ্য যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবসেবা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শপথ বাক্যের ঐতিহ্য এতদিন ধরে চলে আসছে, যার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মনে জাতীয়তাবোধ, মূল্যবোধ এবং একসাথে কার্যকরী হবার উদ্দীপনা সঞ্চার করা হয়।

২০২৫ সালে বিদ্যালয়ে পাঠ হবে নতুন শপথ বাক্য

২০২৫ সালে যে নতুন শপথ বাক্য প্রবর্তিত হয়েছে, তা পূর্বের শপথ বাক্য থেকে কিছু ভিন্নতা নিয়ে এসেছে। এটি শিক্ষার্থীদের নতুন এক আদর্শ ও মূল্যবোধের দিকে নিয়ে যেতে চায় যা আধুনিক সমাজের প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে।

নতুন শপথ বাক্যের প্রেক্ষাপট

নতুন শপথ বাক্যের প্রবর্তনের পেছনে রয়েছে কয়েকটি প্রধান কারণ:

  • সামাজিক ও মানবিক মূল্যের পুনঃনির্ধারণ: বাংলাদেশের সমাজ বদলে যাচ্ছে, যার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের মানসিকতাকেও আধুনিক ও বৈশ্বিক মানবিক মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য করা প্রয়োজন।
  • নৈতিক ও নাগরিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ: বর্তমান শপথ বাক্যে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে মানুষের সেবা ও দেশের প্রতি অনুগততার ওপর।
  • ধর্মনিরপেক্ষতা ও একতা: বাংলাদেশের বহুজাতিক ও বহুধর্মী সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নতুন শপথ বাক্যে "হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা" বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রকাশ করে।

নতুন শপথ বাক্যের বাক্যসমূহ

নতুন শপথ বাক্যটি হলো:

"আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিবো। দেশের প্রতি অনুগত থাকিবো। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব। হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি। আমিন।"

শপথ বাক্যের বিশ্লেষণ:

  • মানুষের সেবায় নিয়োজিত হওয়া: এই অংশটি শিক্ষার্থীদের মানবসেবার প্রতি আকর্ষণ করতে চায়। এটি তাদের দায়িত্ববোধকে জাগ্রত করে যে, মানুষের জন্য কাজ করা তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।
  • দেশের প্রতি অনুগততা: দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধকে জোর দিয়ে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দেশের প্রতি একনিষ্ঠতা রাখতে উৎসাহিত করা হয়।
  • একতা ও সংহতি বজায় রাখা: বাংলাদেশের দীর্ঘ ইতিহাসে বিভিন্ন ধরনের সমাজিক বিভক্তির উদাহরণ থাকলেও, এই শপথ বাক্য তাদের একতা ও সংহতির মূল্য চর্চা করতে বলে।
  • মহান আল্লাহ বা মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা: এই অংশটি ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রকাশ করে। এটি দেশের বহুধর্মী জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত করে এবং তাদের আদর্শকে সম্মান দেয়।

প্রয়োগ ও প্রভাব

নতুন শপথ বাক্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিদিনের সমাবেশে পাঠ করানো হবে, যেখানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর এটি পাঠ করা হবে। এই শপথ বাক্যের প্রয়োগের মাধ্যমে:

  • সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের স্বীকৃতি: বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হবে।
  • নাগরিক দায়বদ্ধতার বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীদের মধ্যে নাগরিক দায়বদ্ধতা ও সমাজসেবার প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
  • জাতীয়তাবোধের উন্নয়ন: দেশের প্রতি ভালোবাসা ও গর্ব বাড়াতে এই শপথ বাক্য অবদান রাখবে।

সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া

নতুন শপথ বাক্যের প্রবর্তনকে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন, যারা মনে করেন যে এটি পূর্বের শপথ বাক্যের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক মূল্য নষ্ট করছে। তবে সরকার ও শিক্ষাবিদরা এই পরিবর্তনকে সময়সাপেক্ষ ও সমাজের আধুনিকতার সাথে মানানসই বলে দাবি করেছেন।

২০২৫ সালের নতুন শপথ বাক্য বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার্থীদের নতুন আদর্শ ও মূল্যবোধের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদেরকে সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে উৎসাহিত করে। এই শপথ বাক্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবী প্রজন্মকে তৈরি করা হবে যারা মানবতাবাদী, দেশপ্রেমিক এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রতি সজাগ।

Post a Comment

Previous Post Next Post