কম্পিউটারকে দ্রুতগতি করার জন্য Top 20 Command Prompt

কমান্ড প্রম্পট (Command Prompt) উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি শক্তিশালী টুল যা ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটারের বিভিন্ন সেটিংস এবং ফাংশন কনফিগার করতে পারেন। কমান্ড প্রম্পটের মাধ্যমে আপনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি অনুসরণ করে পিসির গতি বাড়াতে পারেন। নিচে Command Prompt ব্যবহার করে পিসি দ্রুত করার জন্য ২০টি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিটি পদ্ধতি পিসির কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সহায়ক এবং কমান্ডের মাধ্যমে কনফিগার করা যায়।

Top 20 Command Prompt


১. সিস্টেম ফাইল চেকার (SFC) চালান

Command: sfc /scannow

ব্যাখ্যা: সিস্টেম ফাইল চেকার (SFC) একটি উইন্ডোজ টুল যা সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো স্ক্যান করে এবং সেগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত বা অনুপস্থিত সংস্করণগুলো সঠিক ফাইল দ্বারা প্রতিস্থাপন করে। এই কমান্ডটি চালিয়ে আপনি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের স্থায়িত্ব ও গতি নিশ্চিত করতে পারেন।

কেন দরকার: যদি পিসির কার্যকারিতা ধীর হয়ে যায় বা অপ্রত্যাশিত ক্র্যাশ হয়, তাহলে সিস্টেম ফাইলের ত্রুটি থাকতে পারে। এই কমান্ডটি সেই ত্রুটিগুলো ঠিক করতে পারে।


২. ডিস্ক ক্লিনআপ চালান

Command: cleanmgr

ব্যাখ্যা: ডিস্ক ক্লিনআপ উইন্ডোজের একটি বিল্ট-ইন টুল যা আপনার ডিস্ক থেকে অপ্রয়োজনীয় ফাইল যেমন টেম্পোরারি ফাইল, পুরানো সিস্টেম ফাইল, রিসাইকেল বিনে থাকা ফাইল ইত্যাদি মুছে ফেলে। কমান্ডটি চালানোর পর ডিস্ক ক্লিনআপ উইন্ডো প্রদর্শিত হবে যেখানে আপনি যেসব ফাইল মুছতে চান তা নির্বাচন করতে পারবেন।

কেন দরকার: অপ্রয়োজনীয় ফাইলগুলো মুছে ফেললে স্টোরেজে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় এবং পিসির গতি বাড়ে।


৩. ডিস্ক ডিফ্র্যাগমেন্ট করুন

Command: defrag C:

ব্যাখ্যা: হার্ড ডিস্কের ফাইলগুলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়, যা ডেটা পড়ার সময় বেশি নেয়। ডিফ্র্যাগমেন্টেশন ফাইলগুলো পুনর্গঠিত করে যাতে তারা হার্ড ডিস্কে ধারাবাহিকভাবে থাকে এবং দ্রুত অ্যাক্সেস করা যায়।

কেন দরকার: ফাইল পুনর্গঠন করলে হার্ড ড্রাইভের পারফরম্যান্স বাড়ে এবং ডেটা অ্যাক্সেসের সময় কমে।


৪. ড্রাইভের ত্রুটি চেক করুন (CHKDSK)

Command: chkdsk /f /r

ব্যাখ্যা: chkdsk কমান্ডটি হার্ড ড্রাইভের ফাইল সিস্টেম এবং ড্রাইভে ত্রুটি চেক করে। /f সুইচ দিয়ে ফাইল সিস্টেমের ত্রুটি ঠিক করা হয় এবং /r দিয়ে হার্ড ড্রাইভের ক্ষতিগ্রস্ত সেক্টরগুলো চেক করে সেগুলোর ডেটা পুনরুদ্ধার করা হয়।

কেন দরকার: হার্ড ড্রাইভে ত্রুটি থাকলে পিসি ধীর হতে পারে। এই কমান্ড চালিয়ে সেই ত্রুটিগুলো ঠিক করা সম্ভব।


৫. স্টার্টআপ প্রোগ্রাম ম্যানেজ করুন (MSConfig)

Command: msconfig

ব্যাখ্যা: স্টার্টআপে চলা প্রোগ্রামগুলো আপনার পিসিকে ধীর করতে পারে। MSConfig চালিয়ে আপনি অপ্রয়োজনীয় স্টার্টআপ প্রোগ্রামগুলো অক্ষম করতে পারবেন। এতে পিসি স্টার্টআপের সময় কমে যাবে এবং গতি বাড়বে।

কেন দরকার: স্টার্টআপের সময় অপ্রয়োজনীয় প্রোগ্রাম চললে পিসির স্টার্টআপ সময় বেশি লাগে এবং সিস্টেম ধীর হয়ে যায়।


৬. টেম্প ফাইল মুছে ফেলুন

Command: del /q/f/s %TEMP%\*

ব্যাখ্যা: টেম্পোরারি ফাইলগুলো পিসির স্টোরেজে জমা হতে হতে স্টোরেজের জায়গা দখল করে এবং পিসির গতি ধীর করে। এই কমান্ডটি টেম্প ফাইল মুছে ফেলে পিসিকে দ্রুত করতে সাহায্য করে।

কেন দরকার: অপ্রয়োজনীয় টেম্প ফাইল স্টোরেজের জায়গা খরচ করে এবং পিসির কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলে।


৭. ইন্টারনেট DNS ফ্লাশ করুন

Command: ipconfig /flushdns

ব্যাখ্যা: এই কমান্ডটি DNS ক্যাশ মুছে ফেলে। DNS ক্যাশ আপনার ব্রাউজারের পূর্ববর্তী ওয়েবসাইটের DNS এন্ট্রি জমা রাখে। অনেক সময় পুরনো বা ত্রুটিপূর্ণ DNS ক্যাশ পিসির ইন্টারনেট গতি কমিয়ে দেয়, তাই এটিকে ফ্লাশ করে নতুন DNS এন্ট্রি নেয়া হয়।

কেন দরকার: DNS ফ্লাশ করলে ইন্টারনেট ব্রাউজিং গতি উন্নত হয়, বিশেষ করে যদি DNS এন্ট্রি পুরনো বা ত্রুটিপূর্ণ হয়।


৮. মেমোরি ডায়াগনস্টিক টুল চালান

Command: mdsched.exe

ব্যাখ্যা: মেমোরি ডায়াগনস্টিক টুল RAM এর ত্রুটি শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। RAM এ কোনো ত্রুটি থাকলে পিসির কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, তাই এই টুল ব্যবহার করে RAM স্ক্যান করে সমস্যা চিহ্নিত করা যায়।

কেন দরকার: RAM এর ত্রুটি পিসির গতিকে ধীর করতে পারে, তাই সময়মতো এটি পরীক্ষা করা উচিত।


৯. অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক কানেকশন বন্ধ করুন

Command: netstat -an

ব্যাখ্যা: এই কমান্ডটি পিসিতে চলমান সক্রিয় নেটওয়ার্ক কানেকশনগুলো প্রদর্শন করে। যেগুলো প্রয়োজন নেই সেগুলো বন্ধ করে ইন্টারনেটের গতি উন্নত করা যায়।

কেন দরকার: অপ্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক কানেকশন বন্ধ করলে পিসির নেটওয়ার্ক রিসোর্সগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।


১০. বুট কনফিগারেশন চেক করুন

Command: bcdedit

ব্যাখ্যা: bcdedit কমান্ড ব্যবহার করে পিসির বুট কনফিগারেশন চেক করা যায় এবং সেটিংস অপ্টিমাইজ করা যায়। বুট লোডার সঠিকভাবে কাজ না করলে পিসি ধীর হতে পারে।

কেন দরকার: সঠিক বুট কনফিগারেশন সিস্টেমকে দ্রুত স্টার্টআপ ও বন্ধ করতে সহায়তা করে।


১১. অপ্রয়োজনীয় সেবা বন্ধ করুন

Command: net stop "service name"

ব্যাখ্যা: এই কমান্ড দিয়ে উইন্ডোজে চলমান অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো বন্ধ করা যায়। সার্ভিসগুলো বন্ধ করলে পিসির রিসোর্সগুলো বাঁচানো যায় এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়।

কেন দরকার: অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস চালু থাকলে পিসির রিসোর্সগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং গতি ধীর হয়।


১২. ব্যাচ ফাইল তৈরি করে স্বয়ংক্রিয় ক্লিনআপ (ধারাবাহিক)

Command: echo Y|del %temp%\*.* & echo Y|del %systemroot%\temp\*.* & echo Y|del %systemroot%\prefetch\*.* 

ব্যাখ্যা: এই কমান্ড দিয়ে আপনি একটি ব্যাচ ফাইল তৈরি করতে পারেন, যা পিসির টেম্প ফাইল এবং প্রিফেচ ফাইলগুলো মুছে ফেলবে। এর ফলে পিসির স্টোরেজ খালি হবে এবং গতি বাড়বে।

কেন দরকার: প্রতিদিনের ব্যবহারিক কাজগুলোতে টেম্প এবং প্রিফেচ ফাইল জমে যায়, যা স্টোরেজ খরচ করে এবং পিসির কর্মক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। এই ব্যাচ ফাইল তৈরি করলে ম্যানুয়ালি ক্লিনআপ করার প্রয়োজন পড়বে না।


১৩. রাম ডাম্প মুছে ফেলুন

Command: del /f /s /q %systemdrive%\*.dmp

ব্যাখ্যা: ক্র্যাশ হলে উইন্ডোজ সিস্টেম একটি ডাম্প ফাইল তৈরি করে যা RAM এর একটি ছবি সংরক্ষণ করে। এই ফাইলগুলো সময়ের সাথে জমা হতে পারে এবং স্টোরেজের জায়গা দখল করে। ডাম্প ফাইল মুছে ফেলে আপনি পিসির স্পেস খালি করতে পারেন।

কেন দরকার: RAM ডাম্প ফাইলগুলো খুব বেশি স্টোরেজ ব্যবহার করলে, পিসির গতি ধীর হয়ে যায়। ডাম্প ফাইলগুলো মুছে ফেলে স্টোরেজে জায়গা তৈরি করা এবং পিসির গতি বাড়ানো সম্ভব।


১৪. সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট টুল চালান

Command: services.msc

ব্যাখ্যা: এই কমান্ডটি চালিয়ে আপনি সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট কনসোল খুলতে পারবেন, যেখানে উইন্ডোজের সমস্ত সার্ভিসের তালিকা দেখতে পারবেন। এখান থেকে অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো বন্ধ করা যায়।

কেন দরকার: পিসিতে অপ্রয়োজনীয় সার্ভিস চালু থাকলে পিসি ধীর হয়ে যায়। সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার করে অপ্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো বন্ধ করলে সিস্টেমের গতি বাড়ানো যায়।


১৫. বাতিল হওয়া আপডেট ফাইলগুলো মুছে ফেলুন

Command: net stop wuauserv & del %systemroot%\SoftwareDistribution\Download\*.* /f /s /q

ব্যাখ্যা: উইন্ডোজ আপডেট ডাউনলোড ফোল্ডারে পুরনো আপডেট ফাইলগুলো জমা হয়, যা স্টোরেজের জায়গা দখল করে। এই কমান্ড চালিয়ে সেগুলো মুছে ফেলে স্টোরেজ খালি করা যায়।

কেন দরকার: পুরনো আপডেট ফাইলগুলো স্টোরেজ দখল করে রাখলে পিসির গতি ধীর হতে পারে। ফাইলগুলো মুছে ফেলে স্টোরেজে জায়গা তৈরি করে পিসির পারফরম্যান্স উন্নত করা যায়।


১৬. অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টলেশন লগ মুছে ফেলুন

Command: del /f /s /q %systemdrive%\*.log

ব্যাখ্যা: অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার সময় সিস্টেমে লগ ফাইল তৈরি হয়, যা সময়ের সাথে জমা হতে পারে এবং স্টোরেজের জায়গা দখল করে। এই কমান্ডটি চালিয়ে লগ ফাইল মুছে ফেলে পিসির কর্মক্ষমতা বাড়ানো যায়।

কেন দরকার: অপ্রয়োজনীয় লগ ফাইলগুলো মুছে ফেললে স্টোরেজ খালি হয় এবং পিসির কর্মক্ষমতা ভালো হয়।


১৭. রিস্টোর পয়েন্ট সীমাবদ্ধ করুন

Command: vssadmin delete shadows /for=c: /all

ব্যাখ্যা: উইন্ডোজ রিস্টোর পয়েন্টগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করে, যা সিস্টেম পুনরুদ্ধারে কাজে লাগে। তবে পুরনো রিস্টোর পয়েন্টগুলো অনেক স্পেস দখল করে ফেলে। এই কমান্ডটি চালিয়ে পুরনো রিস্টোর পয়েন্টগুলো মুছে ফেলা যায়।

কেন দরকার: রিস্টোর পয়েন্ট স্পেস দখল করে রাখলে ডিস্ক স্পেস কমে যায়, তাই পুরনো রিস্টোর পয়েন্টগুলো মুছে ফেলে স্পেস খালি করা উচিত।


১৮. সিস্টেম পারফরম্যান্স চেক করুন (Performance Monitor)

Command: perfmon /report

ব্যাখ্যা: এই কমান্ডটি পিসির বিস্তারিত পারফরম্যান্স রিপোর্ট তৈরি করে। এতে পিসির কোন অংশগুলো ধীর করছে তা নির্ধারণ করা যায় এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

কেন দরকার: পিসির পারফরম্যান্স সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং সেগুলোর সমাধান করতে পারফরম্যান্স মনিটর কার্যকরী।


১৯. সিস্টেম ইনফরমেশন চেক করুন

Command: systeminfo

ব্যাখ্যা: systeminfo কমান্ডটি আপনার সিস্টেমের সমস্ত তথ্য প্রদর্শন করে। এতে আপনার সিস্টেমের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কনফিগারেশন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়, যা পিসি দ্রুত চালানোর জন্য দরকারি হতে পারে।

কেন দরকার: সিস্টেমের সম্পূর্ণ তথ্য জানলে আপনি পিসির কর্মক্ষমতা সমস্যাগুলো ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।


২০. ডিস্ক পার্টিশন ম্যানেজ করুন

Command: diskpart

ব্যাখ্যা: diskpart একটি ডিস্ক পার্টিশন ম্যানেজমেন্ট টুল, যা দিয়ে ডিস্কে নতুন পার্টিশন তৈরি করা, মুছে ফেলা এবং ফরম্যাট করা যায়। পার্টিশন ঠিকঠাকভাবে ম্যানেজ করলে পিসির কর্মক্ষমতা বাড়তে পারে।

কেন দরকার: পার্টিশন সঠিকভাবে ম্যানেজ করা না থাকলে স্টোরেজের অপচয় হতে পারে। তাই এই টুল ব্যবহার করে পার্টিশন ঠিক করা দরকার।

Previous Post Next Post