ই-পাসপোর্টে: আধুনিক ভ্রমণ এবং নিরাপত্তার নতুন যুগ – প্রাপ্তি, সুবিধা, ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গাইড

ই-পাসপোর্ট (e-Passport) হচ্ছে আধুনিক ডিজিটাল পাসপোর্ট যা প্রথাগত পাসপোর্টের তুলনায় আরও নিরাপদ ও উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি। ই-পাসপোর্ট এমন একটি পাসপোর্ট যেখানে ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য চিপের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার পর এটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী ভ্রমণকারীদের জন্য অতিরিক্ত সুবিধা এবং নিরাপত্তা প্রদান করছে।

এই আর্টিকেলে, ই-পাসপোর্ট কী, কেন ই-পাসপোর্ট করতে হবে, ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম, ফরম পূরণের নির্দেশাবলী, এবং আবেদন প্রক্রিয়ায় কী কী কাগজপত্রের প্রয়োজন, তার বিশদ বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

ই-পাসপোর্টে আধুনিক ভ্রমণ এবং নিরাপত্তার নতুন যুগ – প্রাপ্তি, সুবিধা, ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ গাইড

ই-পাসপোর্ট কি?

ই-পাসপোর্ট, বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট, হল এমন এক ধরনের পাসপোর্ট যেখানে মালিকের ব্যক্তিগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য ইলেকট্রনিক চিপের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। এই চিপটি পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠায় সংযুক্ত থাকে এবং এতে পাসপোর্টধারীর নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর, এবং আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস স্ক্যানের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য থাকে।

এটি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং ICAO (International Civil Aviation Organization) এর মান অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। ই-পাসপোর্টের বিশেষত্ব হল এতে থাকা চিপটি বিভিন্ন বিমানবন্দর বা সীমান্তে থাকা স্ক্যানারের মাধ্যমে পড়া যায়, যা ভ্রমণকারীর পরিচয় দ্রুত এবং সঠিকভাবে যাচাই করতে সাহায্য করে। ফলে জালিয়াতি এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করা যায়।

কেন ই-পাসপোর্ট করবেন?

ই-পাসপোর্ট করার কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে। এসব সুবিধার কারণে অনেকেই ই-পাসপোর্ট করতে আগ্রহী হচ্ছেন। নিচে ই-পাসপোর্ট করার কয়েকটি প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:

১. নিরাপত্তা বৃদ্ধি:

ই-পাসপোর্টে থাকা ইলেকট্রনিক চিপের মাধ্যমে মালিকের পরিচয় সঠিকভাবে যাচাই করা যায়। এতে জালিয়াতি এবং চুরি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। পাসপোর্ট চুরির ঘটনা ঘটলেও চিপে থাকা তথ্যের কারণে সেটি জালিয়াতির জন্য ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

২. দ্রুততার সুবিধা:

ই-পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীরা দ্রুত সীমান্ত পাড়ি দিতে পারেন। বিমানবন্দরে স্ক্যানার ব্যবহার করে সহজে এবং দ্রুত পরিচয় যাচাই করা যায়, যার ফলে ভ্রমণকারীদের জন্য অপেক্ষার সময় কমে যায়।

৩. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি:

ই-পাসপোর্ট বর্তমানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তৈরি এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই পাসপোর্টকে স্বীকৃতি দেয়। ফলে যেকোনো দেশে ভ্রমণের সময় এটি একটি নিরাপদ এবং সহজ সমাধান।

৪. অনলাইন সুবিধা:

ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশে নাগরিকরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন, যা আবেদন প্রক্রিয়াকে সহজ এবং সময় সাশ্রয়ী করে তুলেছে। পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা না করেই ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করে নেওয়া যায়।

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম:

ই-পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার প্রধান ধাপগুলো নিচে দেয়া হলো:

১. অনলাইন আবেদন:

ই-পাসপোর্টের জন্য প্রথমেই অনলাইনে আবেদন করতে হবে। ই-পাসপোর্টের জন্য সরকারী ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফরমটি পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণ করার সময় নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.epassport.gov.bd/

২. আবেদন ফি জমা:

ফরম পূরণ করার পর নির্দিষ্ট ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দিতে হবে। ফি নির্ধারণ করা হয় পাসপোর্টের বৈধতার সময় অনুযায়ী। সাধারণত পাঁচ বা দশ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়, এবং ফি ভিন্ন হতে পারে।

৩. বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান:

আবেদন ফরম পূরণের পর নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে। বায়োমেট্রিক তথ্যের মধ্যে আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিস স্ক্যানের মতো তথ্য থাকে। এছাড়াও আপনার ছবি তোলা হবে এবং স্বাক্ষর নেয়া হবে।

৪. আবেদন যাচাই:

বায়োমেট্রিক তথ্য দেয়ার পর আপনার আবেদনটি যাচাই করা হবে। সবকিছু সঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হবে এবং আপনাকে জানিয়ে দেয়া হবে।

৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ:

ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হওয়ার পর আপনাকে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেটি সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনের সময় প্রাপ্তি রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।

ফরম পূরণের নির্দেশাবলী:

ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন ফরম পূরণ করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। ফরম পূরণের সময় নিম্নলিখিত নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন:

১. ব্যক্তিগত তথ্য:

ফরমে আপনার পুরো নাম, বাবার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান এবং বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি সঠিকভাবে দিতে হবে। নামের বানান এবং অন্যান্য তথ্যের ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন, যাতে ভুল না হয়।

২. পাসপোর্টের ধরণ:

ফরমে আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট (পাঁচ বছর বা দশ বছর মেয়াদি) চাচ্ছেন তা উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও এটি সাধারণ পাসপোর্ট, অফিসিয়াল পাসপোর্ট, বা কূটনৈতিক পাসপোর্ট কিনা, তা নির্বাচন করতে হবে।

৩. জাতীয় পরিচয়পত্র:

জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ফরমে সঠিকভাবে দিতে হবে। 

৪. যোগাযোগের তথ্য: আপনার বর্তমান ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, এবং স্থায়ী ঠিকানা দিতে হবে। যোগাযোগের তথ্য সঠিকভাবে দিলে পাসপোর্ট সম্পর্কিত যেকোনো নোটিফিকেশন আপনার কাছে পৌঁছানো সহজ হবে।

৫. পাসপোর্ট সংগ্রহের স্থান নির্বাচন: আপনার নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিস নির্বাচন করতে হবে, যেখানে আপনি আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করবেন। এটি পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে নির্দিষ্ট পাসপোর্ট অফিস থেকে সেটি সংগ্রহ করতে হবে।

৬. বায়োমেট্রিক তথ্য: অনলাইন ফরম জমা দেওয়ার পর আপনাকে বায়োমেট্রিক তথ্যের জন্য নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে। এখানে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস স্ক্যান, এবং আপনার ছবি নেওয়া হবে।

ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ও খরচ কত টাকা বাংলাদেশে?

ই-পাসপোর্ট করার জন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং নির্দিষ্ট ফি প্রয়োজন হয়। নিচে ই-পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং খরচের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম সনদপত্র: ই-পাসপোর্টের জন্য প্রথমেই জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে, তাহলে জন্ম সনদপত্রের প্রয়োজন হবে।

২. পূর্ববর্তী পাসপোর্ট (যদি থাকে): যদি আপনার পুরনো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) বা ম্যানুয়াল পাসপোর্ট থাকে, তবে সেটির মূল কপি ও ফটোকপি জমা দিতে হবে।

৩. ছবি: বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদানের সময় আপনার ছবি তোলা হবে, তাই আলাদা ছবি জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

৪. ফি জমাদানের রশিদ: অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার পরে আপনাকে রশিদ সংগ্রহ করতে হবে এবং এটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।

ই-পাসপোর্ট ফি:

ই-পাসপোর্টের জন্য খরচ নির্ভর করে আপনি কত বছরের মেয়াদ চান তার উপর। বাংলাদেশে ই-পাসপোর্টের জন্য নিম্নলিখিত তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে:

  • ৫ বছরের জন্য: সাধারণ (৪৫ কার্যদিবস) – ৩৪৫০ টাকা
  • ১০ বছরের জন্য: সাধারণ (৪৫ কার্যদিবস) – ৫৭৫০ টাকা
  • জরুরি ফি: যদি দ্রুত পাসপোর্ট দরকার হয়, তাহলে অতিরিক্ত ফি দিয়ে জরুরি সার্ভিস পাওয়া যাবে।
ই-পাসপোর্ট ফি এর বিস্তারিত:

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদের জন্য আলাদা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। মেয়াদের সাথে সাথে আপনি কত দ্রুত পাসপোর্ট পেতে চান, তার উপরও ফি নির্ভর করে। নিচে ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ এবং জরুরি ফি এর তালিকা দেওয়া হলো:

সাধারণ ই-পাসপোর্ট (৫ বছর মেয়াদী):

১. ৩৪৫০ টাকা – সাধারণ ডেলিভারি (৪৫ কার্যদিবস) ২. ৬৯০০ টাকা – জরুরি ডেলিভারি (২১ কার্যদিবস) ৩. ১০৩৫০ টাকা – সুপার জরুরি ডেলিভারি (৭ কার্যদিবস)

১০ বছর মেয়াদী ই-পাসপোর্ট:

১. ৫৭৫০ টাকা – সাধারণ ডেলিভারি (৪৫ কার্যদিবস) ২. ৮৬২৫ টাকা – জরুরি ডেলিভারি (২১ কার্যদিবস) ৩. ১৩৮০০ টাকা – সুপার জরুরি ডেলিভারি (৭ কার্যদিবস)

এই ফি জমা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন উপলব্ধ রয়েছে, যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে বা অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। ফি জমা দেওয়ার পরে আপনাকে একটি রশিদ প্রদান করা হবে, যা আবেদনের সময় সংযুক্ত করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

ই-পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া অনেক সহজ করা হয়েছে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। এগুলো হলো:

১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ: এটি আপনার পরিচয় প্রমাণের জন্য আবশ্যক। যাদের NID নেই, তারা জন্ম সনদপত্র ব্যবহার করতে পারবেন।

২. পুরনো পাসপোর্ট (যদি থাকে): যদি আপনার পুরনো পাসপোর্ট থাকে, তাহলে এর মূল কপি এবং ফটোকপি সাথে রাখতে হবে।

৩. অনলাইনে জমা দেওয়া ফর্মের প্রিন্ট কপি: ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করার পরে যে ফর্ম পূরণ করা হবে, সেটির একটি প্রিন্ট কপি সাথে রাখতে হবে।

৪. ফি জমাদানের রশিদ: আপনার পাসপোর্টের ফি জমা দেওয়ার পরে আপনাকে যে রশিদ দেওয়া হবে, সেটি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা:

ই-পাসপোর্ট মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের চেয়ে অনেক বেশি সুবিধা প্রদান করে। নিচে এর কিছু প্রধান সুবিধা উল্লেখ করা হলো:

১. উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা: ই-পাসপোর্টে ইলেকট্রনিক চিপ থাকে যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করা অনেক কঠিন করে তোলে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

২. বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত: ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে স্বীকৃত। এটি পাসপোর্ট চেক এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াকে অনেক দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।

৩. ইমিগ্রেশন সময় বাঁচায়: ই-পাসপোর্টের ব্যবহার করলে ইমিগ্রেশনে অপেক্ষার সময় কমে যায়। অনেক দেশের এয়ারপোর্টে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট গেট (e-gates) ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে, যা সাধারণ পাসপোর্টের তুলনায় দ্রুত প্রসেসিং করে।

ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে সেবা উন্নয়ন:

বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার মাধ্যমে জনগণকে উন্নত ও দ্রুত সেবা প্রদান করতে চায়। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটি সরকারের ডাটাবেজে সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে সহায়তা করবে।

  • বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি: প্রতিটি ই-পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক তথ্য (যেমন, আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিস স্ক্যান) সংরক্ষণ করা হয়, যা পাসপোর্ট হোল্ডারের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ডিজিটাল ফর্ম জমা দেওয়া: ই-পাসপোর্ট আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল করা হয়েছে, ফলে আপনি বাড়িতে বসেই আবেদন করতে পারবেন।

ই-পাসপোর্ট করার সুবিধাগুলো সংক্ষেপে:

  • দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রসেসিং
  • বায়োমেট্রিক সুরক্ষা
  • বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা
  • ফিজিক্যাল সুরক্ষা এবং দীর্ঘ মেয়াদী ব্যবহার
  • অনলাইনে আবেদন এবং ফি জমার সুযোগ

এই সুবিধাগুলোর মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট সেবাকে আরো উন্নত করছে।

ই-পাসপোর্ট প্রাপ্তির ধাপ:

ই-পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। নিচে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:

১. অনলাইনে আবেদন ফর্ম পূরণ:

প্রথম ধাপ হিসেবে আপনাকে ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং ঘরে বসে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে।

  • ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন: ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে (www.epassport.gov.bd) প্রবেশ করুন।
  • নতুন আবেদন করুন: ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘নতুন আবেদন’ অপশনটি নির্বাচন করুন।
  • ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করুন: আপনার নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন।
  • বায়োমেট্রিক তথ্য: ই-পাসপোর্টে বায়োমেট্রিক তথ্য বাধ্যতামূলক, তাই আঙুলের ছাপ এবং ছবির জন্য বায়োমেট্রিক তথ্য পূরণ করতে হবে।

২. ফি জমা:

আবেদন ফর্ম পূরণ করার পর আপনাকে ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। এটি ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের মাধ্যমে করা যাবে।

  • অনলাইনে পেমেন্ট: ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সরাসরি পেমেন্ট করার অপশন রয়েছে।
  • পেমেন্ট রশিদ: পেমেন্ট সম্পন্ন হলে একটি রশিদ তৈরি হবে। এই রশিদ প্রিন্ট করে রাখুন, এটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার সময় প্রয়োজন হবে।

৩. বায়োমেট্রিক ডেটা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত অফিসে যাওয়া:

আবেদন করার পর আপনাকে নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক ডেটা (ছবি, আঙুলের ছাপ, এবং আইরিস স্ক্যান) জমা দিতে হবে। এর জন্য আপনাকে পূর্বেই একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন সঠিক সময়ে অফিসে উপস্থিত হয়ে বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

৪. পাসপোর্ট প্রাপ্তি:

বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দেওয়ার পরে আপনার আবেদনটি প্রসেসিং এ যাবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময় পর অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে পাসপোর্ট কুরিয়ারের মাধ্যমেও পাঠানো হয়।

৫. পাসপোর্ট রিনিউয়াল:

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে বা আপনার পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে সহজেই অনলাইনে পুনরায় আবেদন করে রিনিউয়াল করতে পারবেন।

ই-পাসপোর্ট রিনিউয়ালের ধাপ:

যদি আপনার ই-পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা আপনি হারিয়ে ফেলেন, তবে পুনরায় পাসপোর্ট রিনিউ করা বা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটি পূর্বের মতোই সহজ এবং নির্ধারিত ধাপগুলো অনুসরণ করে সম্পন্ন করা যায়।

১. অনলাইনে পুনরায় আবেদন ফর্ম পূরণ:

রিনিউয়ালের জন্যও আপনাকে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.epassport.gov.bd) থেকে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় যেমন ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়, রিনিউয়ালের ক্ষেত্রেও একই ধাপ প্রযোজ্য।

  • রিনিউয়াল আবেদন নির্বাচন করুন: ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘রিনিউয়াল আবেদন’ অপশনটি নির্বাচন করুন।
  • পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য প্রদান করুন: আপনার পুরনো পাসপোর্টের নাম্বার, ইস্যুর তারিখ এবং অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য আপডেট করুন: যদি কোনো ব্যক্তিগত তথ্য আপডেট করতে চান, যেমন ঠিকানা বা ছবি পরিবর্তন, তবে সেগুলো সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

২. ফি পরিশোধ:

রিনিউয়াল আবেদন সম্পন্ন করার পর নতুন পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিতে হবে। আগের মতোই ফি পরিশোধ করতে পারবেন মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকের মাধ্যমে।

৩. বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান:

রিনিউয়ালের জন্য যদি আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য পুনরায় দেওয়ার প্রয়োজন হয় (যেমন আঙুলের ছাপ বা ছবির আপডেট), তবে আপনাকে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

৪. পাসপোর্ট সংগ্রহ:

রিনিউ করা ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে নির্ধারিত অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করা যাবে। কিছুক্ষেত্রে, কুরিয়ারের মাধ্যমে পাসপোর্ট আপনার ঠিকানায় পাঠানো হতে পারে।

ই-পাসপোর্টের সুবিধা:

ই-পাসপোর্টের অনেক সুবিধা রয়েছে যা প্রচলিত পাসপোর্টের তুলনায় একে আরো আধুনিক ও নিরাপদ করে তুলেছে। নিচে ই-পাসপোর্টের কয়েকটি প্রধান সুবিধা উল্লেখ করা হলো:

  1. উন্নত নিরাপত্তা: ই-পাসপোর্টে এম্বেডেড ইলেকট্রনিক চিপ থাকায় এটি অনেক বেশি নিরাপদ। এই চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োমেট্রিক ডেটা সংরক্ষিত থাকে যা ভেরিফিকেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়।

  2. বায়োমেট্রিক শনাক্তকরণ: ই-পাসপোর্টে আঙুলের ছাপ, চোখের আইরিস স্ক্যানসহ বিভিন্ন বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে যা পাসপোর্টের সঠিকতা নিশ্চিত করে।

  3. দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া: ই-পাসপোর্ট ব্যবহারকারীরা উন্নত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সুবিধা নিতে পারেন, যেখানে পাসপোর্ট স্ক্যান করে এবং বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাই করে দ্রুত প্রবেশ বা প্রস্থান করা যায়।

  4. বৈশ্বিক স্বীকৃতি: ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং উন্নত দেশগুলোর ইমিগ্রেশন সিস্টেমে এই পাসপোর্টের প্রাধান্য দেওয়া হয়।

  5. ডিজিটাল সিকিউরিটি: ই-পাসপোর্টে প্রতিটি তথ্য এনক্রিপ্টেড হওয়ার কারণে এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, যা পাসপোর্ট জালিয়াতি বা তথ্য চুরি প্রতিরোধ করে।

ই-পাসপোর্ট কেন করবেন?

বর্তমান সময়ে ই-পাসপোর্টের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে ভ্রমণ করতে হলে, দ্রুত ও নিরাপদ ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার জন্য ই-পাসপোর্ট এক অপরিহার্য দিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-পাসপোর্টের অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে:

  1. উন্নত প্রযুক্তি: ই-পাসপোর্ট অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়, যা আপনার পরিচয় ও ভ্রমণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

  2. জালিয়াতি প্রতিরোধ: ই-পাসপোর্টে থাকা বায়োমেট্রিক ডেটা আপনার পরিচয়কে অনন্য করে তোলে, যার ফলে জালিয়াতির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

  3. সুবিধাজনক প্রক্রিয়া: ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে ভিসা আবেদন, ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া, এবং বিমানবন্দরে দ্রুত চেক-ইন করার সুবিধা পাওয়া যায়।

  4. দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার: ই-পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণত ১০ বছর পর্যন্ত হয়, যা প্রচলিত পাসপোর্টের তুলনায় দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা প্রদান করে।

  5. আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্টের স্বীকৃতি বেশি থাকে, যার ফলে ভ্রমণকালে ঝামেলা কম হয়।

ই-পাসপোর্ট ফরম পূরণের নির্দেশাবলী:

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন ফরম পূরণের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হয়। ফরম পূরণের সময় নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ:

  1. সঠিক তথ্য প্রদান করুন: আবেদন ফরমে সমস্ত ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

  2. ফরমের প্রতিটি ফিল্ড পূরণ করুন: ফরমের প্রতিটি ফিল্ড যথাযথভাবে পূরণ করা জরুরি।

  3. ঠিকানা ও যোগাযোগ তথ্য: ফরমে আপনার স্থায়ী ঠিকানা এবং বর্তমান ঠিকানা সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও আপনার ইমেইল আইডি এবং মোবাইল নম্বর নির্ভুলভাবে প্রদান করতে হবে যাতে কোনো সমস্যা হলে যোগাযোগ করা যায়।

  1. পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচন: ফরমে পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচন করতে হবে। এটি সাধারণত দুটি ভাগে বিভক্ত—পাবলিক এবং অফিসিয়াল। সাধারণ নাগরিকদের জন্য পাবলিক পাসপোর্টের আবেদন করতে হয়।

  2. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংযুক্তি: ই-পাসপোর্টের আবেদন করার সময় নির্দিষ্ট ডকুমেন্টগুলো ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। এই ডকুমেন্টগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো:

    • জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি: আপনার এনআইডির কপি জমা দিতে হবে।
    • পুরনো পাসপোর্টের কপি (যদি থাকে): যদি আপনার পুরনো পাসপোর্ট থাকে তবে তার কপি সংযুক্ত করতে হবে।
    • প্রমাণ পত্র: যেমন জন্ম নিবন্ধন সনদ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ইত্যাদি লাগতে পারে।
  3. ছবি ও বায়োমেট্রিক তথ্য: আপনার ছবির নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী ফরমে জমা দিতে হবে। এছাড়া, আঙুলের ছাপ এবং অন্যান্য বায়োমেট্রিক তথ্য পাসপোর্ট অফিসে প্রদান করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট করার নিয়ম:

ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ ও সুগম। ই-পাসপোর্ট করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:

  1. অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ: প্রথম ধাপে ই-পাসপোর্টের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে পূরণ করতে হবে। এই ফরমে আপনার সকল ব্যক্তিগত ও প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

  2. ডকুমেন্ট আপলোড: ফরম পূরণের পরে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো স্ক্যান করে অনলাইনে আপলোড করতে হবে।

  3. ফি পরিশোধ: ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে। ফি জমা হওয়ার পরে একটি রিসিপ্ট পাবেন, যা আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ।

  4. বায়োমেট্রিক প্রদান: আবেদন জমা দেওয়ার পরে আপনার ছবি, আঙুলের ছাপ এবং চোখের আইরিস স্ক্যানের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।

  5. পাসপোর্ট সংগ্রহ: ই-পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে পাসপোর্ট অফিস থেকে এটি সংগ্রহ করতে হবে অথবা আপনি কুরিয়ারের মাধ্যমে এটি বাড়িতে পেতে পারেন।

ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এই কাগজপত্রগুলো নিম্নরূপ:

  1. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID): আবেদনকারীর বৈধ জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে হবে।

  2. পুরনো পাসপোর্ট (যদি থাকে): যদি আপনার পুরনো কোনো পাসপোর্ট থাকে, তাহলে সেটির কপি জমা দিতে হবে।

  3. জন্ম নিবন্ধন সনদ: নতুন পাসপোর্টের জন্য জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি প্রয়োজন হতে পারে।

  4. ছবি: নির্ধারিত মাপ অনুযায়ী সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে।

  5. ফি জমার রসিদ: ই-পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দেওয়ার রসিদ সংযুক্ত করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট করার খরচ:

ই-পাসপোর্টের জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের খরচ নির্ধারিত রয়েছে, যা পাসপোর্টের মেয়াদ এবং প্রয়োজনীয়তার ওপর ভিত্তি করে ভিন্ন হয়। নিচে ই-পাসপোর্টের খরচের বিবরণ দেওয়া হলো:

  1. পাঁচ বছরের পাসপোর্ট:

    • সাধারণ প্রসেসিং: প্রায় ৩,৫০০ টাকা
    • জরুরি প্রসেসিং: প্রায় ৫,৫০০ টাকা
  2. দশ বছরের পাসপোর্ট:

    • সাধারণ প্রসেসিং: প্রায় ৫,০০০ টাকা
    • জরুরি প্রসেসিং: প্রায় ৭,০০০ টাকা
  3. বিশেষ প্রসেসিং: আরো দ্রুত পাসপোর্ট প্রয়োজন হলে, বিশেষ প্রসেসিং চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে, যা প্রায় ১০,০০০ টাকা হতে পারে।

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ও নবায়ন:

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ সাধারণত ৫ বা ১০ বছর হয়, নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেছেন। পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় ই-পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে, যা নতুন পাসপোর্টের মতোই সহজ প্রক্রিয়া।

ই-পাসপোর্টের সুবিধাসমূহ:

ই-পাসপোর্টের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে এর নানা সুবিধা উপলব্ধ হচ্ছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা নিচে উল্লেখ করা হলো:

  1. উন্নত নিরাপত্তা: ই-পাসপোর্টের মধ্যে একটি চিপ থাকে যা পাসপোর্টের তথ্য এনক্রিপ্ট করে রাখে। এটি সুরক্ষা বাড়ায় এবং জালিয়াতি প্রতিরোধে সহায়ক।

  2. সহজ যাচাইকরণ: ই-পাসপোর্টের ডিজিটাল চিপের মাধ্যমে সীমান্তে দ্রুত এবং সঠিকভাবে পাসপোর্ট যাচাই করা সম্ভব। এতে ভ্রমণের সময় সুরক্ষা বাড়ে এবং সময় বাঁচানো যায়।

  3. দ্রুত প্রক্রিয়া: ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার সময় সাধারণত কম হয়। আবেদন জমা দেওয়ার পরে দ্রুত পাসপোর্ট প্রাপ্তি সম্ভব হয়।

  4. আন্তর্জাতিক মান: ই-পাসপোর্ট আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহজে গ্রহণযোগ্য।

ই-পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া:

ই-পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে নবায়নের জন্য কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে:

  1. অনলাইন আবেদন: নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আবার অনলাইনে ফরম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফরমে পুরনো পাসপোর্টের তথ্য প্রদান করতে হবে।

  2. ডকুমেন্ট আপলোড: নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন পুরনো পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, এবং অন্যান্য কাগজপত্র আপলোড করতে হবে।

  3. ফি পরিশোধ: নবায়ন ফি পরিশোধ করতে হবে। এই ফি পুরনো পাসপোর্টের মেয়াদ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।

  4. বায়োমেট্রিক তথ্য: প্রয়োজনীয় বায়োমেট্রিক তথ্য যেমন নতুন ছবি এবং আঙুলের ছাপ প্রদান করতে হবে।

  5. নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ: নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে নতুন পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।

আন্তর্জাতিক ব্যবহারের জন্য ই-পাসপোর্ট:

ই-পাসপোর্ট বিশ্বব্যাপী ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দর এবং সীমান্ত চেকপয়েন্টে ই-পাসপোর্টের সুবিধা পাওয়া যায়। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে দ্রুত প্রবেশ ও প্রস্থান সম্ভব হয়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

ই-পাসপোর্টের ভবিষ্যৎ:

ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে ভবিষ্যতে আরো উন্নত ফিচার যুক্ত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আরও উন্নত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, তাত্ক্ষণিক যাচাইকরণ সিস্টেম, এবং আরও সহজ ব্যবহারযোগ্যতা নিশ্চিত করা হবে। ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে আরো বহুমুখী সেবা প্রদান সম্ভব হতে পারে।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQ):

১. ই-পাসপোর্টের জন্য কতদিন সময় লাগবে?

  • সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে, তবে জরুরি প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে এটি আরও কম হতে পারে।

২. ই-পাসপোর্টের জন্য কোন নির্দিষ্ট ফি প্রযোজ্য?

  • ফি পাসপোর্টের মেয়াদ এবং প্রসেসিং টাইম অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। সাধারণত ৩,৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়।

৩. আমি কি ই-পাসপোর্টের জন্য অনলাইন আবেদন করতে পারি?

  • হ্যাঁ, ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন অনলাইনে করা সম্ভব। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস আপলোড করতে হবে এবং ফি পরিশোধ করতে হবে।

৪. যদি আমার পুরনো পাসপোর্ট হারিয়ে যায়, তাহলে কি করব?

  • পুরনো পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে দ্রুত পাসপোর্ট অফিসে জানাতে হবে এবং একটি নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হবে। হারানো পাসপোর্টের রিপোর্ট পুলিশ স্টেশনেও করতে হবে।

৫. ই-পাসপোর্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত কিভাবে?

  • ই-পাসপোর্টের চিপ নিরাপদ এনক্রিপশন প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্য সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও, বিভিন্ন সীমান্ত চেকপয়েন্টে উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা যাচাইকরণ করা হয়।

এই আর্টিকেলটি ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দিতে সক্ষম হওয়া উচিত। কোনো অতিরিক্ত তথ্য বা সাহায্যের প্রয়োজন হলে, সংশ্লিষ্ট পাসপোর্ট অফিসের সাথে যোগাযোগ করা উচিত।

ই-পাসপোর্টের জন্য সাধারণ সমস্যা ও সমাধান

১. আবেদন ফরম পূরণে ভুল:

  • সমস্যা: আবেদন ফরম পূরণে ভুল থাকলে পাসপোর্টের প্রক্রিয়া দেরি হতে পারে বা আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • সমাধান: ফরম পূরণের পূর্বে সব তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করে নিন। ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।

২. ডকুমেন্ট হারানো বা ভুল জমা:

  • সমস্যা: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হারানো বা ভুল ডকুমেন্ট জমা দিলে আবেদন প্রক্রিয়া থমকে যেতে পারে।
  • সমাধান: ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার আগে একটি তালিকা তৈরি করুন এবং নিশ্চিত করুন সব ডকুমেন্ট সঠিকভাবে আপলোড হয়েছে।

৩. ফি পরিশোধে সমস্যা:

  • সমস্যা: অনলাইনে ফি পরিশোধ করতে সমস্যা হলে আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ হতে পারে।
  • সমাধান: ফি পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করুন। যদি কোনো সমস্যা হয়, ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সাপোর্টে যোগাযোগ করুন।

৪. বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান না করা:

  • সমস্যা: বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান না করলে পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে না।
  • সমাধান: আবেদন জমা দেওয়ার পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করুন।

৫. আবেদন স্ট্যাটাস চেকের সমস্যা:

  • সমস্যা: আবেদন স্ট্যাটাস চেক করতে সমস্যা হলে পাসপোর্টের প্রস্তুতির সময় জানা কঠিন হতে পারে।
  • সমাধান: আবেদন স্ট্যাটাস নিয়মিত চেক করতে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা গ্রাহক সেবা কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।

ই-পাসপোর্টের অগ্রগতি ও ভবিষ্যত

১. প্রযুক্তির উন্নতি:

  • ই-পাসপোর্ট প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে এর ফিচার এবং নিরাপত্তা আরও উন্নত হবে। নতুন প্রযুক্তি যেমন ব্লকচেইন এবং উন্নত এনক্রিপশন সিস্টেম ই-পাসপোর্টকে আরও নিরাপদ করবে।

২. ডিজিটাল পরিচয়পত্র:

  • ভবিষ্যতে ই-পাসপোর্টের সাথে ডিজিটাল পরিচয়পত্রের সংযোজন হতে পারে। এতে ই-পাসপোর্ট এককভাবে আরও অনেক পরিচয় প্রমাণের কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।

৩. আন্তর্জাতিক সমন্বয়:

  • বিভিন্ন দেশের মধ্যে পাসপোর্টের সঠিকতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সমন্বয় আরও উন্নত হবে। এতে ভ্রমণের সময় সুরক্ষা এবং সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

৪. ই-পাসপোর্টের সুবিধা বৃদ্ধি:

  • ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে সরকারি সেবা, ব্যাংকিং পরিষেবা, এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলির জন্য আরও দ্রুত এবং সহজ প্রক্রিয়া সরবরাহ করা হবে।

ই-পাসপোর্ট বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আধুনিক নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তির একটি চমৎকার উদাহরণ। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এবং বিভিন্ন প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সহজতর হয়েছে। একটি সঠিকভাবে পূর্ণ এবং সঠিক তথ্যসহ আবেদন করে আপনি সহজেই আপনার ই-পাসপোর্ট পেতে পারেন।

ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা বা প্রশ্ন থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করুন। পাশাপাশি, আপনার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সর্বদা নির্ভরযোগ্য এবং অফিসিয়াল তথ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নিন।

এই আর্টিকেলটি ই-পাসপোর্ট সম্পর্কে সকল মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করতে সক্ষম হওয়া উচিত। যদি আরও কোনো তথ্য বা সহায়তা প্রয়োজন হয়, স্থানীয় পাসপোর্ট অফিস বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না।

Previous Post Next Post