যিনি পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ একাই দখল করে চার কোটি মানুষের হত্যা করেছিল তিনি হলেন চেঙ্গিস খান। এই চেঙ্গিস খান মঙ্গোলিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত সব লোকদের গোলাম বানিয়ে রেখেছিলেন। আজ আমরা ইতিহাসের চেঙ্গিস খানের জীবনকাহিনী ভালো করে বুঝবো। তার নেওয়া প্রত্যেকটি নির্ণয়ের কারণ জানবো। চেঙ্গিস খান পৃথিবীর মানচিত্র বদলে দিয়েছিলেন। তিনি না থাকলে হয়তো পৃথিবী অন্যরকম হতো। তিনি পৃথিবীর জন্য মানুষের জীবন নিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। তিনি মানুষের বলি দেননি বরং মনুষ্যত্বের বলে দিয়েছিলেন। তিনি প্রথম হত্যা করেছিলেন নিজের বারো-তেরো বছর বয়সে। আপনারা জানলে অবাক হবেন নিজের ভাইকেই মেরে ফেলেছিলেন চেঙ্গিস খান। নিজের পরিবারের একজন কে হত্যা করেন চেঙ্গিস খান। তাও আবার খাদ্যের জন্য। ভাবতে কেমন অবাক লাগছে তাইনা? খাবারের জন্য নিজের ভাইকে মেরে ফেলে চেঙ্গিস খান। তবে এমন কি হয়েছিল চেঙ্গিস খানের সাথে? কি এমন সহ্য করতে হয় চেঙ্গিস খানকে? যার ফলে তার হৃদয় পাথরের মত হয়ে যায়? 1162 সালে কোন নদীর পাড়ে গোষ্ঠীর লিডারের ঘরে জন্ম নেন। তার আসল নাম ছিল তেমুজিন। তিমুজিনের নয় বছর বয়সে তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে। তার বাবা বিয়ে ঠিক করবার পর বাড়ি ফিরছিলেন এমন সময় শত্রু কাবিল বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেন তার বাবাকে।
এই দুর্ঘটনা তেমুজিন এর পুরো জীবনটাকে বদলে দেয় এবং এই ঘটনার পর তার মা বিধবা হয়ে যায়। তার ছয় ভাই বোন অনাথ হয়ে যায়। আর এতদিন যে গোষ্ঠী তাদের মানতো সেই গোষ্ঠী এখন তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়। তাদেরকে মঙ্গোলিয়ার ঘন জঙ্গলের জীবজন্তুর মাঝে ছেড়ে দেয়। ন বছর বয়সে এটা বুঝে গিয়েছিল যে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য চাই শক্তি। তার মনে হয়েছিল যদি শক্তি না থাকে তাহলে তার সাথে কেউই থাকবেনা এবং পুরো পরিবার মঙ্গোলিয়ার জঙ্গলে জীবন যাপন করেছিল। জঙ্গলের ফলমূল মাছ ধরে ছোট-খাটো স্বীকার করে সবাই ভাগ করে খেত। এই কঠিন পরিস্থিতি তারা সবাই একসাথে থেকে পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে একে অপরের জন্য জীবন দিতে রাজি ছিল এবং একে অপরের জন্য জীবন দিতেও পারত। নিজের পরিবারের জন্য তারা সবকিছু করতে পারত। বড় ভাই নিজের স্বীকার করা খাবার কারো সাথে ভাগ করত না এবং পরিবারের স্বীকার করা খাবার চুরি করে খেয়ে নিত এবং বাকিদের কে নিজের বল দেখাতে চাই তো। এটাতে পছন্দ ছিল না। তিনি তাঁর পরিবারের জন্য 13 বছর বয়সে নিজের বড় ভাইকে হত্যা করে। একটি বাচ্চার যে তিন বছর বয়সী ঘোড়া চালানো শিখে ছিল। নয় বছর বয়সে নিজের বাবার মৃত্যু দেখেছিল। তার জন্য অর্থ হল হত্যা করা। তার কাছে সাধারণ জীবনযাপন এর অর্থ হল হত্যা করা। তার কাছে কাউকে বাঁচাতে হলে কারও মৃত্যু আবশ্যিক এইসব ঘটনা ছোটবেলা থেকেই মনুষ্যত্বের শত্রু এবং হিংসা করে তোলে।
চেঙ্গিস খান গোষ্ঠীর প্রত্যেক পুরুষ মহিলা এমনকি ছোট ছোট বাচ্চাদের অমানুষের মত মেরে ফেলে। কারণ তার স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায়। আপনারা হয়তো অবাক হচ্ছেন তাইনা? যে মানুষটা প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একজনের পূর্বপুরুষ। যে প্রত্যেকটি হেরে যাওয়া দেশের রানী এবং রাজকুমারীর সাথে বিয়ে করেছিল। শত শত বাচ্চা জন্ম দিয়েছিল। তিনি একটি স্ত্রীর কারনে এত মানুষের হত্যা করেছিলেন কেন? ইতিহাস অনুযায়ী চেঙ্গিস খানের প্রথম স্ত্রী ছিল। সেই মেয়ে যার সাথে তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে গিয়েছিল। এই কারণে তিনি তার প্রথম স্ত্রীকে গোষ্ঠীর কবল থেকে বাঁচানোর জন্য তার ছোটবেলার বন্ধুর সাহায্য নেয়। তিনি শুধুমাত্র চিপসের পুরুষদেরই 9-10 মহিলা ও বাচ্চাদের হত্যা করে। আর এখান থেকেই তার নাম পৃথিবীর সবথেকে রাগী শাসকদের লিস্টে চলে আসে। এরপর চেঙ্গিস নিজের প্রিয় বন্ধু কেউ হত্যা করে। কিন্তু নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু কে কেন হত্যা করে? স্ত্রীকে কবল থেকে বাঁচিয়ে আনতে গিয়েছিলেন তখন তিনি তার বন্ধুর সাহস এবং ছন্দ দেখে অনেকেই তাঁকে নিজের লিডার মানতে শুরু করে। আর এই কারনেই সে তার বন্ধুকে মেরে ফেলে। সে যুদ্ধে সামু জিনের লোকেদের গরম তেলের মধ্যে ফেলে মারে। আর এর ফলস্বরূপ তেমুজিন ততদিন স্ত্রী হয়ে বসেনি। যতদিন এলাকাকে হত্যা করেছে অহিংসা চলতে থাকা অধিকার করার পর পরবর্তী শিকার চায়না কে বানায়।
চায়না মঙ্গোলিয়ার মানুষকে অনেক অত্যাচার করে। সেই বদলা নিতে চেঙ্গিস খান চায়নার অবস্থা খারাপ করে দিয়েছিল। 1210 সাল থেকে 1215 সাল এ সময় ইউরোপকে টার্গেট করে ফেলে এবং তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দেয়। এর মাঝে আসে কাসমিয়া এম্পায়ার আর চেঙ্গিস খানের সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট রাস্তার উপর দিয়েই রয়েছে। এই কারণে ওখানকার বন্ধু বানানোর জন্য 500 লোকের জন্য উপহার পাঠিয়েছিল। কিন্তু ওখানকার রাজা সবকিছু ছিনিয়ে নেয় এবং চেঙ্গিস খানকে উপহারের বদলে গুপ্তচর পাঠানোর দোষ দেয়। কিন্তু চেঙ্গিস খাঁ কেউ হার মানেনি। তিনি তার প্রিয় তিনটে দূতকে পাঠায় নিজের কথা বোঝানোর জন্য। তখন রেগে গিয়ে তিন জনকে পাঠিয়ে দেয় চেঙ্গিস খানের কাছে বার্তা পাঠানোর জন্য। এরপর চেঙ্গিস খাঁ রেগে যায় এবং চেঙ্গিস খান সাহেব পুরো রাজ্যকে শেষ করে দেয়। বাধা দেওয়ায় প্রত্যেক সাধারন মানুষের মৃত্যু হয়। আর সেই রাজা সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং কোন এক আইল্যান্ডে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কিন্তু চেঙ্গিস খানের তখনই তিনি পুত্র জালাল উদ্দিনকে মারতে চায়। জালালউদ্দিন বাঁচার জন্য দিল্লির সুলতান ইলতুৎমিসের কাছে পৌঁছায়। কিন্তু ভয়ানক এবং নীরাজা চেঙ্গিস খানের নাম শুনে সুলতান ইলতুৎমিশ আলাউদ্দিনের কোন সাহায্য করেনি। নদীর কাছে জাল্লাউদ্দিন এর মৃত্যু হয়। চেঙ্গিস খানের এতকিছু করার কারণ এটাই ছিল যে সে পুরো পৃথিবীর কাছে একটাই বার্তা দিতে চেয়েছিল। তার সাথে যে শত্রুতা করবে তার পুরো বংশ শেষ হয়ে যাবে।